রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ এটিএম বুথে

হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ এটিএম বুথে

করোনার সংক্রোমণ প্রতিরোধে ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট পয়েন্টের পাশাপাশি এটিএম বুথগুলো নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত করা এবং সেখানে হান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেটি যথাযথভাবে পরিপালন হচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। জীবাণুনাশক করার উপকরণও নেই অনেক বুথে। ফলে গ্রাহকের পাশাপাশি বুথগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরাও ঝুঁকিতে রয়েছেন। গত দুইদিন রাজধানির বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকেরই এটিএম বুথ সেবা রয়েছে।

গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। ওই সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক, এটিএম, পস ও এজেন্ট পয়েন্টসমূহ নিয়মিতভাবে জীবাণুমুক্ত ও তদস্থলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ব্যাংকিং ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

জানা গেছে, করোনোর সংক্রমোন প্রতিরোধে ব্যাংকিং কার্যক্রমও সীমিত করা হয়েছে। ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সীমা ৬ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে এখন নগদ টাকার একমাত্র ভরসা এটিএম বুথ। কিন্তু এটিএম বুথগুলো জীবাণুনাশক করার উদ্যোগ গ্রহন করেনি বেশিরভাগ ব্যাংক। গ্রাহকের সুবিধার্থে রাখা হয়নি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও।

বাসাবো সিনেমা হলে নিচে বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের এটিএম বুথ। ওই বুথের নিরাপত্তা প্রহরী দেলোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা বুথ পরিস্কার করার কিছুই দেওয়া নেই। কেবল একজোড়া হাতমোজা দেওয়া হয়েছে। এটা না দিলেও কি করতাম। তাই নিজের টাকায় মাস্ক কিনেছি।

এ বুথের বিপরীত পাশে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এটিএম বুথ। বুথে দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী আইনুল বলেন, বুথ জীবাণুনাশক করার জন্য কিছুই সরবরাহ করা হয়নি। মানুষ বুথে এসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার চায়, কিন্তু আমি দিতে পারি না। ওই বুথে শনিবার সন্ধ্যায় টাকা তুলেন উত্তরা ব্যাংকের কর্মকর্তা আলামিন হোসেন। জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশিরভাগ এটিএম বুথে একই অবস্থা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কোন ব্যবস্থাই নেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা রাখা জরুরি ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে আমি গ্লাভস পড়েই বুথ থেকে টাকা তুললাম।

সম্প্রতি মাদারটেক খোলা হয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি উপশাখা। ওই উপশাখা ঘেঁষেই রয়েছে ব্যাংকটির একটি এটিএম বুথ। ওই বুথের নিরাপত্তা প্রহরী আজিম বলেন, ব্যাংক থেকে ফ্লোর ওয়াশ করার উপকরণ দেয়া হয়েছে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়নি। এছাড়া এনসিসি, ডাচ্ বাংলা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ব্রাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি গ্লোবালসহ আরও কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রোমণ প্রতিরোধে ব্যাংকের শাখার পাশাপাশি এটিএম বুথও জীবাণুমুক্ত রাখা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই এটা পরিপালন করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি আমাদের নির্দেশনার ব্যর্তয় ঘটে, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তোলার ভোগান্তি কমাতে প্রায় ২৭ বছর আগে দেশে চালু করা হয় অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম বুথ)। এই বুথ থেকে কেবল টাকা উত্তোলনের সুবিধাই পাওয়া যায়। এরপর চালু করা হয় টাকা জমা নেওয়ার বুথ, যা ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন (সিডিএম) নামে পরিচিত। আর সর্বশেষ টাকা জমা ও উত্তোলনের উভয় সুবিধাসম্পন্ন বুথ চালু করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির এ মেশিনের নাম সিআরএম বা ক্যাশ রিসাইকেলার মেশিন। অর্থাৎ ব্যাংককে না গিয়ে এখন রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই এখানে টাকা জমা ও উত্তোলন দু-ই করতে পারছেন গ্রাহকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে দেশে মোট এটিএম বুথে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৬১টি। আর সিডিএম ও সিআরএম মেশিন রয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৪০৮টি ও ২৫৮টি। এছাড়া সারাদেশে পস মেশিনের সংখ্যা ৬০ হাজার ৪৭৪টি। অন্যদিকে, জানুয়ারি পর্যন্ত ডেবিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৮৬ লাখ ১১ হাজার ৬৮১ জন। একই সময়ে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৮ জন। আর প্রি-পেইড কার্ডের গ্রাহক ৪ লাখ ২৮ হাজার ৯১০ জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877